0
দহন কালের কাব্য

--শফিকুল ইসলাম
[​IMG]
কবি শফিকুল ইসলামের চিন্তা চেতনা বা দর্শন অনেকটাই এদেশের সাধারণ মানুষদের নিয়ে। যাদের অধিকাংশই মেহনতী শ্রমজীবী। যাদেরকে খেটে খাওয়া, সর্বহারা, সামাজিক বঞ্চিত মানব শ্রেণীকে বুঝায়। বইটির উৎসর্গ টিকায় ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই চিরচেনা অনুপ্রাণিত উৎসাহ-উদ্দীপনার বাণীঃ-
উদয়ের পথে শুনি কার বাণী
ভয় নাই ওরে ভয় নাই-
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার, ক্ষয় নাই...
মনে হয় কবি কোন এক লক্ষ্যে আমাদেরকে নিয়ে যাওয়ার আহবান করছেন। প্রথমেই যে কবিতাটি চোখে পড়ে তা হল "সম্মুখে বাধা আছে" শিরোনামে। তাতে রয়েছে সর্ব সমাজে সর্ব সময়ের আকাঙ্খিত মানবতার মুক্তির বাণী। কবি লিখেনঃ--
সম্মুখে বাধা আছে, পথ বন্ধুর
তবু জানি যেতে হবে বহুদূর ॥
পায়ে ফুটুক যতই কাটা
থামলে চলবে না এ পথ হাটা-
সীমিত সময়, তবু পথ অনেক দূর ॥
(সম্মুখে বাধা আছে)
একটি সঠিক লক্ষ্যে পৌছার কথা কবি তার কবিতায় আহবান করছেন। কিন্তু কবি একথাও উল্লেখ করেছেন এ পথ অনেক দীর্ঘ ও কন্টকযুক্ত যেখানে পৌছতে হলে অনেক বাধা সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিন্দা-ধিকৃতি এ পথে চির বাধা। তা সত্বেও লক্ষ্যে পৌছুতে বিপ্লবীকে করতে হবে শক্রর মোকাবেলা। কবি লিখেনঃ--
চলতে পথে শত কুমন্ত্রণা
হাসিমুখে সয়ে যত যন্ত্রণা
করতে হবে মোকাবিলা শক্রর ॥
সত্যের পথ কুসুমিত নয়
জেনেই বিপ্লবীর চলতে হয়
বিপ্লবী মন পরোয়া করে না মৃত্যুর ॥
(সম্মুখে বাধা আছে)
পরবর্তী কবিতায় কবি আহবান করেন সেই একই বাণী। যেখানে চিত্রিত হয়েছে সাম্য সমতার এক সুন্দর আগামী। কবি লিখেনঃ--
পথ যতো হোক বন্ধুর, বন্ধু যেওনা থামি
আসবেই আসবে সুন্দর আগামী ॥
(পথ যতো হোক বন্ধুর, বন্ধু যেওনা থামি)
কবির এই অসাধারণ সৃষ্টিকর্ম বর্তমান বাংলা সাহিত্যে প্রগতি ও উদারতার ধারায় বহুমাত্রিকতা দান করেছে। নজরুল যেখানে আজীবন বিপ্লবী হতে পারেনি (বিদ্রোহ যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল), রবীন্দ্রনাথ যেখানে সংস্কারের বাণীতে ডুবে ছিলেন কবি শফিকুল ইসলাম সেখানে অনেকটা সুকান্তের ন্যায় বিপ্লবী মূর্তি ধারণ করেছেন। নৈরাজ্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদের সাথে সমাজতন্ত্রের মুক্ত চিন্তার লড়াইয়ে শান্তি-স্বাধীনতা কামনা করেছেন। যেখানে প্রধান শক্তি হিসাবে সাধারণ জনগণের কথা উল্লেখ করেছেন।
নজরুল রবীন্দ্রসহ অন্যান্য (সুকান্ত ব্যতিত) যে সকল কবি সামাজিক শোষণ, নির্যাতনের উপর কবিতা লিখেছেন তাদের সাথে কবি শফিকুল ইসলামের পার্থক্য হল প্রথমতঃ তারা কেউই যথাযথভাবে শ্রেণী-সচেতন ছিলেন না। কেউই শোষিত জনতার সাথে সর্বাত্মকভাবে একাত্মতা বোধ করেননি। তাদের সামগ্রিক সৃষ্টি কর্মের মধ্যে এটা ক্ষুদ্র অংশের ন্যায় ছিল। কবি শফিকুল ইসলাম এ ক্ষেত্রে সকল রাজনৈতিক মতবাদের উর্ধ্বে মানবিক মতবাদের বাণী প্রচার করেছেন। সময়ের সকল দাবীর বলয়ে তার এই দর্শন, চিন্তা অনেকটাই অগ্নিস্ফুরণ।
তাই সব শেষে বলা যায়, কবি শফিকুল ইসলাম সার্থক তাঁর এই রচনায়। তাঁর চিন্তা বেচে থাকবে যুগ যুগ ধরে যতদিন মানুষ রবে এই ধরাতলে। কারণ তিনি মূলত এদেশের সর্বহারা শ্রমজীবি মানুষের জয়গান নিয়েই লিখেছেন। সেখানে খুজেছেন তাঁর আসল ঠিকানা। কবি লিখেনঃ--
মাটির পৃথিবীতে যারা দিল প্রাণ
অথচ যারা পেলনা সম্মান-
সেই সব শ্রমজীবি মানুষের সমাবেশ-ই
আমার স্থায়ী ঠিকানা ॥
(আমার দেশের শ্রমিকের বলিষ্ঠ বাহু)।
[ গ্রন্থের নামঃ দহন কালের কাব্য, লেখকঃ শফিকুল ইসলাম। প্রকাশকঃ মিজান পাবলিশার্স, ৩৮/৪ বাংলাবাজার, ঢাকা- ১১০০।ফোনঃ ৯৫১২৯৪৬, ৭১১১৪৩৬। মোবাইলঃ ০১৫৫২৩৯১৩৪১ ]

OR




বইয়ের ট্যাগঃ,

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top